অলিম্পিকের ফাইনাল বলে আগের তিন শিরোপামঞ্চে হোঁচট খাওয়াটা ফিরে ফিরে আসছে। ভেন্যু মারাকানা বলে ১৯৫০ সালের বিষাদগাথার স্মৃতি উঠছে উসকে। আর প্রতিপক্ষ জার্মানি বলে ২০১৪ বিশ্বকাপের ১-৭ গোলের সেই লজ্জা আসছে ঘুরে-ফিরে।
আজ ফুটবল-তীর্থ মারাকানায় অলিম্পিক ফুটবলের অধরা সোনা জয়ের অভিযানে তাই ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ কেবল জার্মানি নয়। ইতিহাসও!
এমনিতে অলিম্পিকের সোনার পদক জয় নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না ফুটবলের পরাশক্তিরা। মূলত অনূর্ধ্ব-২৩ দল, সে কারণে পরের প্রজন্মের ফুটবলারদের বাজিয়ে দেখাই মুখ্য। সে দিক দিয়ে এবারের ব্রাজিল ব্যতিক্রম। বিশ্ব ফুটবলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এই এক জায়গাতেই তো সর্বোচ্চ সাফল্য পায়নি। যে কারণে এবার ঘরের মাঠে সোনার পদক জিততে মরিয়া। আর তা এতটাই যে, দেশসেরা তারকা নেইমারকে কোপা আমেরিকায় বিশ্রাম দিয়ে অলিম্পিকের জন্য আগলে রাখে ব্রাজিল।
সেই কৌশলে কাজও দিয়েছে। একে একে সবগুলো ধাপ পেরিয়ে তারা চলে এসেছেন ফাইনালের মঞ্চে। আজ জার্মানির বিপক্ষে শেষ ধাপটুকুন পেরোতে পারলেই চলে।
১৯৮৪, ১৯৮৮, ২০১২ অলিম্পিকেও কিন্তু সোনার পদক জয়ের লড়াইয়ে ছিল ব্রাজিল। কিন্তু
প্রতিবার হেরে সন্তুষ্ট থাকতে হয় রুপার পদকে। আর আজকের ভেন্যু মারাকানা আবার ‘সেলেসাও’দের
চিরকালীন এক দুঃখের স্মৃতি। ১৯৫০ বিশ্বকাপ ফাইনালে উরুগুয়ের কাছে হার এখনো ভুলতে পারেনি
তারা। ভোলার নয় ২০১৪ বিশ্বকাপের সেমিতে জার্মানির কাছে ১-৭ গোলের সেই হার। আজ জিততে
পারলে ওসব দুঃখে প্রলেপ পড়বে না ঠিকই। কিন্তু অধরা অলিম্পিক সোনার পদক তো ধরা দেবে
অবশেষে।
এই অভিযানের শুরুটা কিন্তু ভালো হয়নি। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইরাকের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্রয়ে রিও অলিম্পিকের পথচলার সূচনা ব্রাজিলের। কান পাতলেই তখন শোনা যেত ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারদের নিয়ে দুয়োধ্বনি। বিশেষত নেইমার ছিলেন সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। দুই ম্যাচ শেষে অবশ্য ব্রাজিল ও নেইমারের প্রত্যাবর্তন প্রবল দাপটে। ডেনমার্ককে ৪-০ গোলে হারিয়ে নকআউট পর্বে উত্তরণ, কলম্বিয়ার বিপক্ষে ২-০ ব্যবধানের জয়ে বিশ্বাস ছড়ানো আর সেমিফাইনালে হন্ডুরাসের বিপক্ষে ৬-০ গোলের বিস্ফোরক জয়ে সোনা জয়ের বিশ্বাসটা যেন আরো বাড়িয়ে দেয় হোজারিও মিকালির শিষ্যরা। ওদিকে জার্মানিও-বা কম কিসে! ব্রাজিলের মতো তারাও ড্র করে অলিম্পিকের প্রথম দুই ম্যাচ। তবে তা গোলশূন্য নয়। মেক্সিকোর সঙ্গে ২-২, এরপর দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে ৩-৩ গোলে।
এরপর ফিজি, পর্তুগাল, নাইজেরিয়াকে হারিয়ে ওঠে ফাইনালে। ব্রাজিল না হয় সর্বশেষ তিন ম্যাচে ১২ গোল দিয়েছে, জার্মানি তো অলিম্পিকে সাকুল্যে দেয় ২১ গোল। প্রতিযোগিতায় এখন পর্যন্ত স্বাগতিক জালে কোনো বল না ঢুকলেও আজ কঠিন পরীক্ষার সামনেই পড়তে হবে মিকালির দলকে। সেই পরীক্ষায় উতরে যাওয়ার ব্যাপারে ভীষণ আশাবাদী ব্রাজিল কোচ। তবে নেইমার, গ্যাব্রিয়েল বারবোসা, গ্যাব্রিয়েল জেসুসদের কাঁধে অহেতুক ২০১৪ সেমিফাইনাল প্রতিশোধের ভার দিতে চান না মিকালি, ‘সেটি ছিল বিশ্বকাপ আর এটি অলিম্পিক।
আমরা প্রতিশোধের কথা না ভেবে এখানে সোনার পদক জয়ের সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।’ ওই শ্রেষ্ঠত্বের মঞ্চটা সবচেয়ে বেশি করে তৈরি নেইমারের জন্য। তবে জার্মানির কোচ হর্স্ট হুবেস তা নিয়ে খুব মাথা ঘামাতে রাজি নন। নেইমারকে নিয়ে আলাদা করে না ভেবে ছক কষছেন বরং সোনার পদকের জন্যই, ‘এটি অলিম্পিক ফাইনাল। এখানে জয়টাই বড় কথা। নেইমারকে নিয়ে না ভেবে আমরা জয় নিয়েই ভাবছি।’ আর ব্রাজিলিয়ানরা তো অলিম্পিকের এই সোনা জয় নিয়ে ভাবছে সেই কবে থেকেই!
এএফপি, ইএসপিএন
No comments:
Post a Comment