১৯৫০ সালের মারাকানাজ্জো ব্রাজিলের ইতিহাসে এখন একটি মিথ। যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও সেই মারাকানাজ্জোর বিষাক্ত অভিজ্ঞতা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে বয়ে বেড়াবে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ এই ফুটবল জাতিটি। কিন্তু সেই ঘটনার ৬৪ বছর মিনেইরোতে যে ঘটনা ঘটেছিল, তাকে কোনভাবেই মারাকানাজ্জোর চেয়ে খাটো করে দেখার উপায় নেই।
মিনেইরে ট্র্যাজেডি কিংবা মিনেইরেজ্জো- নামেও কেউ কেউ একে অভিহিত করেছেন। ট্র্যাজেডির আধুনিক ঘটনাটি ঘটেছিল গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে। আগের ম্যাচেই কলম্বিয়ার জুনিগার হাঁটুর গুঁতোয় কোমরের হাঁড় ভেঙে হসপিটালের বিছানায় ঠাঁই নিয়েছেন ব্রাজিলের পোস্টারবয় নেইমার। নেইমার যে রাতে হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছিলেন, সে রাতে সেই হাসপাতালের বাইরে বসে অসংখ্য ব্রাজিল ভক্ত চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছিলেন।
সেই শোক ব্রাজিল টেনে নিয়ে গিয়েছিল মিনেইরোতে, জার্মার বিপক্ষে। এক নেইমারের শোকে এতটাই কাতর ছিল যে ব্রাজিল, জার্মানদের পেশাদারিত্বের চাপ সইতে পারেনি। যে কারণে ৭-১ গোলের বিশাল লজ্জায় ডুবে বিদায় নিতে হয়েছিল ৫ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের। দুই বছরের ব্যবধানে এবার আর সেমিফাইনালে নয়, একেবারে ফাইনালেই দেখা হয়ে যাচ্ছে ব্রাজিল আর জার্মানির। ইতিহাস বলছে কোন ফাইনালে জার্মানির কাছে হারেনি ব্রাজিল। তবে অবশ্য ফাইনালে একবারই মুখোমুখি হয়েছিল দু`দল, ২০০২ বিশ্বকাপের ফাইনালে। সেবার রোনালদোর জোড়া গোলে জিতেছিল ব্রাজিল।
এবার অলিম্পিকের ফাইনালে মুখোমুখি ফুটবল বিশ্বের অবিসংবাদিত দুটি সেরা দল। জার্মানির সামনে স্বাগতিক ব্রাজিল। সবচেয়ে বড় কথা, দুই বছর আগে ব্রাজিলিয়ানদের হৃদয়ে যে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছিল জার্মানরা, সেই ক্ষতে প্রলেপ লাগানোর একেবারে মোক্ষম সুযোগটা পেয়ে গেলো সেলেসাওরা। হোক না সেটা অলিম্পিকের আসর। তবুও তো একটা শিরোপা লড়াই। ৫ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপের স্বাদ নিলেও যারা এখনও অলিম্পিক সোনার স্বাদ নিতে পারেনি, তারা এবার আর মিস করতে চাইবে কেন!
তার চেয়ে বড় কথা, নেইমারের সামনে ৭-১ গোলের ক্ষত শুকানোর দারুন সুযোগ। লজ্জার সেই ম্যাচে তিনি ছিলেন না। এবার নিজে আছেন। ফাইনালে জার্মানিকে হারিয়ে ব্রাজিলকে সোনা উপহার দিতে পারলে, এটাই হবে নেইমারের পক্ষে আসল প্রতিশোধ গ্রহণ। ব্রাজিলিয়ানরাও পারবে মিনেইরেজ্জোর দুঃখ ভুলতে। যেভাবে ১৯৫৮ সালে পেলে ব্রাজিলকে বিশ্বকাপ জিতিয়ে মারাকানাজ্জোর ক্ষতে প্রলেপ দিয়েছিলেন, সেভাবে নেইমার কি পারবেন? সময়ই বলে দেবে হয়তো
No comments:
Post a Comment